বৈশ্বিক কোম্পানির দিকে দেশীয় গ্র্যাজুয়েটদের আগ্রহ কম

বৈশ্বিক কোম্পানির দিকে দেশীয় গ্র্যাজুয়েটদের আগ্রহ কম

বৈশ্বিক কোম্পানির দিকে দেশীয় গ্র্যাজুয়েটদের আগ্রহ কম হওয়ার পেছনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। আজকের আলোচনায় আমরা এই বিষয়টি বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করব এবং তার সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দিক তুলে ধরব।

১. দেশীয় বাজারে সুযোগের অভাব:

বাংলাদেশে অনেক গ্র্যাজুয়েটের মধ্যে ধারণা রয়েছে যে, তাদের স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জিত ডিগ্রি বা দক্ষতা বৈশ্বিক কোম্পানির জন্য যথেষ্ট না। বৈশ্বিক কোম্পানিগুলি সাধারণত উচ্চ মানের আন্তর্জাতিক শিক্ষা এবং দক্ষতার প্রতি আগ্রহী, যা বাংলাদেশের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে সীমিতভাবে পাওয়া যায়। এই কারণে দেশীয় গ্র্যাজুয়েটরা অনেক সময় বৈশ্বিক কোম্পানির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।

২. বৈশ্বিক কোম্পানির কাজের পরিবেশ:

বৈশ্বিক কোম্পানিগুলির কাজের পরিবেশ অনেক সময় কঠিন এবং অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক। এসব কোম্পানির নিয়োগ প্রক্রিয়া, চাকরির চাপ, দীর্ঘ সময়ের কাজ এবং উচ্চ কর্মক্ষমতার প্রত্যাশা অনেক গ্র্যাজুয়েটের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। তারা সাধারণত একাধিক দায়িত্ব নিতে এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য কাজ করতে প্রস্তুত নন। বাংলাদেশের অনেক গ্র্যাজুয়েট স্থানীয় কোম্পানিতে কাজ করতে বেশি আগ্রহী কারণ সেখানে কাজের চাপ কম এবং সাপ্তাহিক ছুটি অধিক থাকে।

৩. বৈশ্বিক কোম্পানির সাংস্কৃতিক পার্থক্য:

বাংলাদেশের গ্র্যাজুয়েটদের জন্য বৈশ্বিক কোম্পানির কাজের পরিবেশে সাংস্কৃতিক পার্থক্য একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বিদেশি কোম্পানির কর্মপ্রবাহ এবং সামাজিক পরিবেশ বাংলাদেশের সাধারণ অফিস পরিবেশের তুলনায় আলাদা। অনেক গ্র্যাজুয়েট বৈশ্বিক কোম্পানির অফিস কনফ্লিক্ট বা প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কৃতি সম্পর্কিত সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার ভয়ে তাদের প্রতি আগ্রহ হারান।

৪. চাকরি নিরাপত্তা এবং উপার্জন:

বাংলাদেশে সরকারি এবং স্থানীয় বড় কোম্পানিগুলির চাকরি নিরাপত্তা এবং সুবিধাগুলি অনেক গ্র্যাজুয়েটের কাছে বেশি আকর্ষণীয়। বৈশ্বিক কোম্পানিগুলি প্রায়ই চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের নিয়োগ দেয় এবং এতে দীর্ঘমেয়াদী চাকরি নিরাপত্তা বা সুবিধা কম থাকে। এর পাশাপাশি, কিছু বৈশ্বিক কোম্পানি কম মূল বেতন প্রদান করে, যা বাংলাদেশে বসবাসরত গ্র্যাজুয়েটদের জন্য অগ্রহণযোগ্য হতে পারে।

৫. আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার অভাব:

বাংলাদেশের অনেক গ্র্যাজুয়েটের জন্য আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার অভাব একটি প্রধান প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে। বৈশ্বিক কোম্পানির জন্য আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা থাকা অপরিহার্য হতে পারে, তবে বাংলাদেশের গ্র্যাজুয়েটদের জন্য বিদেশে কাজের সুযোগ সীমিত এবং তাদের অনেকেই সেই অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন না। এর ফলে, তারা মনে করেন যে, বৈশ্বিক কোম্পানিতে কাজের সুযোগের তুলনায় দেশীয় কোম্পানিতে কাজের সুযোগ বেশি বাস্তবসম্মত এবং সহজ।

৬. বৈশ্বিক কোম্পানির নিয়োগ প্রক্রিয়া:

বৈশ্বিক কোম্পানির নিয়োগ প্রক্রিয়া অত্যন্ত কঠিন এবং প্রতিযোগিতামূলক। তাদের কাছে শুধুমাত্র দক্ষতা নয়, অতিরিক্ত দক্ষতা যেমন ভাষার জ্ঞান, আন্তর্জাতিক মানের সফট স্কিলস, এবং আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে জানাশোনা থাকা আবশ্যক। অনেক গ্র্যাজুয়েটের কাছে এসব দক্ষতা না থাকায় তারা বৈশ্বিক কোম্পানির নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন না।

৭. কাজের স্থান ও স্থিতি:

বৈশ্বিক কোম্পানির বেশিরভাগ কার্যক্রম প্রধানত বিদেশে চলে। এর ফলে, চাকরির জন্য বিদেশে চলে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা হতে পারে, যা বাংলাদেশের কিছু গ্র্যাজুয়েটের জন্য বেশ কঠিন। তাদের পরিবার এবং সামাজিক দায়িত্ব থাকে, তাই বিদেশে দীর্ঘ সময়ের জন্য কাজ করতে আগ্রহী না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

৮. দক্ষতা এবং যোগ্যতা:

বাংলাদেশে অনেক গ্র্যাজুয়েটের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে দক্ষতার অভাব রয়েছে, যা বৈশ্বিক কোম্পানির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে প্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যানেজমেন্ট বা অন্যান্য ক্ষেত্রগুলিতে আন্তর্জাতিক মানের দক্ষতা না থাকার কারণে তারা বৈশ্বিক কোম্পানির দিকে আকৃষ্ট হন না। এমনকি যারা নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কোর্স করেন, তারাও অনেক সময় স্থানীয় কোম্পানিতে উচ্চতর সুযোগের দিকে আগ্রহী থাকেন।

৯. বাংলাদেশে গ্র্যাজুয়েটদের কর্মসংস্থানের সুযোগ:

বাংলাদেশে অনেক বিদেশি কোম্পানি আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপন করেছে, এবং এইসব কোম্পানিগুলিতে কাজের সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে। তবে বেশিরভাগ গ্র্যাজুয়েট স্থানীয় বাজারে আরো সহজে চাকরি খুঁজে পান এবং স্থানীয় বাজারে কাজ করতে তাদের স্বাচ্ছন্দ্য থাকে।

তবে, বৈশ্বিক কোম্পানিগুলোর প্রতি দেশীয় গ্র্যাজুয়েটদের আগ্রহ কম হওয়া একাধিক কারণে হতে পারে, যেমন তাদের কাছে যথেষ্ট আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা না থাকা, চাকরির নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ, এবং বৈশ্বিক কোম্পানির চ্যালেঞ্জিং কাজের পরিবেশের প্রতি অজ্ঞানতা। এইসব সমস্যার সমাধান হলে এবং বাংলাদেশে অধিক বৈশ্বিক কোম্পানি উন্নতি করে, তবে ভবিষ্যতে দেশীয় গ্র্যাজুয়েটদের বৈশ্বিক কোম্পানির প্রতি আগ্রহ বাড়তে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *