আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়েছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা:প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি
আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়েছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা:প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও ছাত্ররাজনীতির ইতিহাসে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে উঠে এসেছে। ২০১৮ সালের ছাত্র আন্দোলন বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনটি সামাজিক ও শিক্ষাগত দৃষ্টিকোণ থেকে এক নতুন মোড় নিয়ে আসে। এই আন্দোলনটি শুধু শিক্ষার্থীদের মধ্যেই নয়, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উপরেও এক গভীর প্রভাব ফেলে। এক্ষেত্রে শফিকুল আলম, একজন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সমাজ বিশ্লেষক, বলেন— “আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়েছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।” তার বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, কীভাবে এই আন্দোলন শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করেছে এবং শিক্ষাব্যবস্থায় একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সহায়ক হয়েছে।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) দেশের প্রথম বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে (এনএসইউ) আয়োজিত ‘দ্য রোল অব নিউ মিডিয়া ইন রেভ্যুলেশন অ্যান্ড রি-বিল্ডিং’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। এনএসইউ’র মিডিয়া, কমিউনিকেশন অ্যান্ড জার্নালিজম (এমসিজে) প্রোগ্রাম এ সেশনের আয়োজন করে।
প্রেস সেক্রেটারি বলেন, এ আন্দোলনে বেসরকারি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা বুক পেতে দিয়েছেন। কিন্তু এটি গণমাধ্যমে সেভাবে আসেনি। এটি আমাদের গণমাধ্যমের ব্যর্থতা। এ আন্দোলনে দু’টি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে বাংলা ব্লকেড একটি। দিন হিসেবে এ আন্দোলনে ১৮ জুলাই এবং ৩০ জুলাইয়ের খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ১৮ জুলাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধ এবং ৩০ জুলাই শেখ হাসিনাকে ‘লাল কার্ড’ দেখানো তার অন্যতম বড় দিক। এটি ‘নিউ মিডিয়া’র কারণে সম্ভব হয়েছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন: পটভূমি
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলো অস্বচ্ছ ফি কাঠামো, যেগুলি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীদের জন্য আর্থিক চাপ সৃষ্টি করতো। এসব প্রতিষ্ঠানগুলির শিক্ষা মানের সমালোচনা এবং সঠিক প্রশাসনিক ব্যবস্থার অভাবও ছিল। শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল— ফি কাঠামোর স্বচ্ছতা, শিক্ষার মানের উন্নয়ন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন ব্যবস্থা উন্নতকরণ, এবং শিক্ষার্থীদের প্রতিটি দাবির প্রতি সরকারের মনোযোগ। ২০১৮ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে আন্দোলনে নামেন এবং তাদের এসব দাবি সামনে নিয়ে আসেন।
২০১৮ সালের আন্দোলন: প্রেক্ষাপট
২০১৮ সালের শুরুতে একের পর এক আন্দোলন শুরু হয়, কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনটি ছিল সবচেয়ে ব্যাপক ও সাড়া জাগানো। বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের অধিকারের জন্য সড়ক ও রাজপথে নেমে আসে। তারা সাধারণত বেশ কিছু প্রধান দাবির প্রতি আন্দোলন শুরু করে। এর মধ্যে ছিল শিক্ষার মানের উন্নয়ন, ফি কাঠামো এবং ছাত্রদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা। আন্দোলনের মাধ্যমে তারা সরকারের কাছে তাদের দাবি জানাতে এবং শিক্ষাব্যবস্থায় সুষ্ঠু সংস্কারের দাবি তুলতে সক্ষম হয়।
এই আন্দোলন ছিল অন্যান্য আন্দোলনের চেয়ে ভিন্ন কারণ, এটি শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, বরং দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি বৃহত্তর পরিবর্তন আনার উদ্দেশ্যে ছিল। আন্দোলনকারীরা শিক্ষার্থীদের জন্য এক যৌথ প্রেক্ষাপট তৈরির চেষ্টা করছিল, যাতে সরকারের কাছে তাদের দাবি তুলে ধরা সহজ হয়।