রোবটিক্স অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স ক্লাব মাইলস্টোন কলেজ-এর উদ্যোগে বর্ণাঢ্য কর্মশালা অনুষ্ঠিত
রোবটিক্স অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স ক্লাব মাইলস্টোন কলেজ-এর উদ্যোগে বর্ণাঢ্য কর্মশালা অনুষ্ঠিত
ঢাকা: বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তির অভাবনীয় অগ্রগতি এবং উদ্ভাবনী চর্চার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে শিক্ষার্থীদের শুধু বইয়ের জ্ঞানেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না; বরং তাদের হাতে-কলমে শিক্ষার মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার শিখতে হবে। এই উপলব্ধি থেকেই মাইলস্টোন কলেজের রোবটিক্স অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স ক্লাব এক ব্যতিক্রমধর্মী ও বর্ণাঢ্য কর্মশালার আয়োজন করে, যা প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ এবং দক্ষতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
কর্মশালার উদ্দেশ্য ও প্রেক্ষাপট
প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বে টিকে থাকতে হলে আগামী প্রজন্মকে অবশ্যই রোবটিক্স, ইলেক্ট্রনিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), এবং ইন্টারনেট অব থিংস (IoT)-এর মতো বিষয়গুলোয় দক্ষ করে তুলতে হবে। এই ধারণা থেকেই কর্মশালার মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়:
“উদ্ভাবনের পথে শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা জোগানো এবং হাতে-কলমে শিক্ষার মাধ্যমে প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করা।”
এই কর্মশালাটি মাইলস্টোন কলেজের রোবটিক্স অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স ক্লাবের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত, যেখানে একদিকে ছিল প্রযুক্তির পরিচয়, অন্যদিকে ছিল উদ্ভাবনের চর্চা।
উদ্বোধনী অধিবেশন ও অতিথিদের শুভেচ্ছা বক্তব্য
কর্মশালার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট প্রযুক্তিবিদ ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মো. আহসান হাবীব, চেয়ারপারসন, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (GUB)।
তিনি তার বক্তব্যে প্রযুক্তি শিক্ষার বাস্তব প্রয়োগ, রোবটিক্স-এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে উদ্ভাবনী চিন্তাচর্চার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে প্রযুক্তিনির্ভর আগামীর শিক্ষা কেমন হওয়া উচিত এবং কীভাবে বাংলাদেশ এই অগ্রযাত্রায় নেতৃত্ব দিতে পারে।
তিনি বলেন,
“রোবটিক্স ও ইলেক্ট্রনিক্স চর্চা শুধু একটি বিষয় শেখার জন্য নয়, বরং এটি হচ্ছে একটি দৃষ্টিভঙ্গি — যা একজন শিক্ষার্থীকে বিশ্লেষণ করতে শেখায়, সমাধান খুঁজতে শেখায়, এবং নতুন কিছু উদ্ভাবনে সাহস জোগায়।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন—
-
মাননীয় অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জিয়াউল আলম, যিনি শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী শক্তি বিকাশে এমন কার্যক্রমের প্রশংসা করেন এবং ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে আয়োজনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
-
জনাব মো. মাসুদ আলম, উপাধ্যক্ষ (প্রশাসন), যিনি রোবটিক্স ক্লাবের সদস্যদের নিরলস পরিশ্রম এবং সৃজনশীল উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কলেজের অন্যান্য উপাধ্যক্ষবৃন্দ, শিক্ষকবৃন্দ, এবং সহস্রাধিক শিক্ষার্থী, যাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ কর্মশালাটিকে প্রাণবন্ত করে তোলে।
এই কর্মশালার সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন ক্লাবের নিবেদিতপ্রাণ মডারেটর মো. সাইদুর রহমান মুন্সি, সহকারী অধ্যাপক, আইসিটি বিভাগ।
ফারহানা বেগম পলি, সহকারী অধ্যাপক, বিভাগীয় প্রধান আইসিটি বিভাগ নেতৃত্বেই পুরো আয়োজনটি সুচারুরূপে সম্পন্ন হয়। তাঁর প্রাজ্ঞ দিকনির্দেশনা ও ক্লাবের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসাই শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের আগ্রহ জাগিয়ে তুলেছে।
এছাড়াও কর্মশালায় আইসিটি বিভাগের সম্মানিত অনুষদ সদস্যবৃন্দ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেন, যা এই আয়োজনকে সফল করে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
🤖 প্রজেক্ট প্রদর্শনী: উদ্ভাবনের এক অপূর্ব ঝলক
কর্মশালার অন্যতম আকর্ষণীয় অংশ ছিল প্রজেক্ট প্রদর্শনী, যেখানে অংশগ্রহণ করেন বুয়েট রোবটিক্স সোসাইটির একঝাক সদস্যবৃন্দ।
তারা তাদের তৈরি কিছু ব্যতিক্রমধর্মী ও প্রযুক্তিনির্ভর প্রজেক্ট উপস্থাপন করেন, যেমন:
-
লাইন ফলোয়িং রোবট
-
স্মার্ট হোম অটোমেশন সিস্টেম
-
জঙ্গল ও দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় অনুসন্ধানকারী রোবট
-
এআই ভিত্তিক অবজেক্ট ডিটেকশন রোবট
এই অংশটি শিক্ষার্থীদের মাঝে ভীষণ আগ্রহ সৃষ্টি করে এবং অনেকেই আগ্রহভরে তাদের জিজ্ঞাসা করে প্রজেক্ট সম্পর্কে।
ড্রোন শো: আকাশে প্রযুক্তির উড়ান
কর্মশালার এক বিশেষ চমক ছিল জনাব জোবায়ের আল বিল্লাল খান-এর উপস্থাপিত ড্রোন শো।
তিনি রিমোট কন্ট্রোল ও প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে কীভাবে ড্রোন পরিচালনা করা যায়, তা প্রদর্শন করেন।
ড্রোনের নিখুঁত উড্ডয়ন, ল্যান্ডিং এবং আকাশে নানা ভঙ্গিমায় ঘোরাফেরা দেখে দর্শনার্থীরা অভিভূত হন। অনেক শিক্ষার্থী তাদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার পরিকল্পনায় ড্রোন টেকনোলজি অন্তর্ভুক্ত করার আগ্রহ প্রকাশ করে।
📸 ছবির প্রদর্শনী ও মিডিয়া কাভারেজ
কর্মশালার বিভিন্ন মুহূর্ত চিত্রে ধারণ করা হয়, যা পরবর্তীতে কলেজের অফিসিয়াল পেজ ও প্রিন্ট ম্যাগাজিনে প্রকাশের জন্য সংরক্ষণ করা হয়।
মিডিয়া পার্টনার এভরিডে ক্যাম্পাস ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কর্মশালার ছবি ও ভিডিও শেয়ার করার ফলে ব্যাপক সাড়া পড়ে, এবং অভিভাবক ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও ক্লাবের প্রশংসা করেন।
প্রযুক্তির পথে নতুন যাত্রা
এই কর্মশালার মধ্য দিয়ে মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষার্থীরা নতুন এক যাত্রা শুরু করেছে প্রযুক্তির পথে। তাদের চোখে এখন ভবিষ্যতের সম্ভাবনা, হাতে রয়েছে বাস্তব অভিজ্ঞতা, আর মনে রয়েছে উদ্ভাবনের স্বপ্ন।
রোবটিক্স অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স ক্লাব তার প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা, বিশ্লেষণী দক্ষতা ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে। এ ধরনের কর্মশালা শুধু প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত করে না, বরং শিক্ষার্থীদের মাঝে গবেষণা ও উদ্ভাবনের স্পৃহা জাগিয়ে তোলে।
আমরা আশাবাদী, ভবিষ্যতেও এমন আয়োজন অব্যাহত থাকবে এবং একদিন এই ক্লাব থেকেই উঠে আসবে দেশের গর্বিত প্রযুক্তিবিদ ও উদ্ভাবকেরা।